আজ ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এক বেরসিক সাহিত্যিকের জ্যোতিষী বাণী ! নিষ্ফল উক্তির আলোচনা পর্যালোচনা !!

রেজাউল হাবিব রেজা/সম্পাদকীয়

ভবিষ্যৎ বাণী শুধু  জ্যোতিষীরাই করেন না, ভিন্নধারার লোকও করতে পারেন। বিগত দিনে কিশোরগঞ্জের শিল্পকলা একাডেমিতে একজন বেরসিক সাহিত্যিক সাবেক মাহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে একটি ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন। যদি কারো মেমোরিতে থাকে তাহলে সাড়া দেবেন। তিনি বলেছিলেন, ” যারা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ক্ষমতা শেষ বলে আনন্দ প্রকাশ করছেন তারা অতি আনন্দ প্রকাশ কইরেন না। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা শেষ হলেও একটি অপশন খোলা আছে। সেটি হলো, নতুন রাষ্ট্রপতি যদি কোনো কারণ দেখিয়ে শপথ না নেন, তাহলে যতদিননা তিনি শপথ না নিবেন ততদিন তিনি সেই রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ” সাহিত্যিক সাহেব এমন কথার শেষ পর্যায়ে শ্রোতাদেরকে আবারও স্মরণ করিয়ে বললেন “তাই রাষ্ট্রপতির বিদায়ে এত বেশি খুশি বা আনন্দিত হইয়েন না। ”
অর্থাৎ সাহিত্যিককের কথা অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছিল যে, কিংবা মনে হচ্ছিল যে, নতুন রাষ্ট্রপতির সাথে কোনো গোপন আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল। আমরা শ্রোতারা ভাবছিলাম নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হয়তো কোনো কারণে শপথ নেবেন না। সেই অপশন থেকে আগের রাষ্ট্রপতিই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। বক্তার দৃঢ়তা দেখে আমার কাছে সেটাই মনে হয়েছিল সেদিন।
এটা শুধু আমি একা শুনি নাই। শত শত মানুষ এই ভবিষ্যৎবাণী শুনছিলেন।
সাহিত্যিকের কথায় এ যাবত আমি ধারণা নিয়েই ভাবছিলাম, এমন অপশনের সুযোগে আমাদের কিশোরগঞ্জের মানুষ যদি আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকেন তাহলে আমি খুশি,আমরা সবাই খুশি। আরো বেশি খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে, “এবারও আমরা কিশোরগঞ্জবাসী অভিভাবকহীন হচ্ছিনা।”
কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম এমন অপশন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২৪এপ্রিল নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ নেয়ার মধ্যি দিয়ে সেটাই প্রমাণিত হলো। আমরাও অভিভাবকহীন হলাম। আশাবাদীর স্থলে আশাহত হলাম। তাহলে ওনার এমন আশ্বাস বাণীর কী প্রয়োজন ছিলো?
কিছু লোক সমাজে এমন আছে যে, তাদের কাছে কোনো কিছু জানতে না চাইলেও তারা উত্তর দিয়ে বসে। কারণ তারা ভাবে যে, জাতি হ্যাঁ করে বসে আছে তাদের মুখ নিঃসৃত  বাণী শোণার জন্য। আসলে আমরাও এমন কালচারে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি। ঘুণে ধরা সমাজ এরকম ভবিষ্যৎ করনেওয়ালা আশ্বাসবাণীর লোকদেরকেই চায়। ঘুণে ধরা সমাজের জন্য যেসব ঘুণে খাওয়া পন্ডিত দরকার তা বিদ্যমান থাকায় আমাদের অচলায়তন আর ভাঙ্গছেনা, ভাঙ্গবেও না। যারা চমকপ্রদ কথা শোনাতে পারে, নিত্য-নতুন ভুয়া থিসিস দিতে পারে তাদেরই আজ সমাজে কদর বেশি। সমাজে তাদের অর্জনের চেয়ে গর্জন বেশি। পরের দেয়া তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যসূত্র না দিয়ে তা নিজের উদ্ঘাটন করা তথ্য বলে চালিয়ে দেয়া তাদের এক রকম কেরামতিই বটে।
তাদের চক্র বা বলয়ের বাইরে যারা আছে তারা অথর্ব, অজ্ঞ ও বোকা। এ ভাবনাই তাদের সর্বত্র বলবৎ আছে। তাদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গার সাহস কারো নেই। আমি এমন কোনো কোনো শ্রেণি খুঁজে পাইনি যারা মিথ্যাবাদী, চমকপ্রদ ফুলঝুরি সম্পন্ন মানুষকে মহামানব বলে তোয়াজ করেনা।
আমি বলছিলাম একজন অতি আগ্রহী রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের স্থায়িত্ব নিয়ে ভবিষ্যৎ বেরসিক সাহিত্যিক জ্যোতিষীর কথা। তবে অবসরে যাওয়া রাষ্ট্রপতি সুস্থ থাকুক। আগের মতোই মাঠে থাকুক এবং সমাজকে হাস্য-রসের মাধ্যমে উজ্জীবিত রাখুক, এমনটাই কামনাই করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category